ওয়েব সিরিজ: রে

 পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিষেক চৌবে, ভাসান বালা

-সৌভিক বিশ্বাস



আচ্ছা, শুরুতেই বলে রাখা ভালো এটা ফর্মাল যেরকম রিভিউ হয় হয়তো সেইরকম গোছের হবে না। এছাড়া আমি অত বড়ো সিনেমা বোদ্ধা নই যে খুব সিনেমা-বোধ-সমৃদ্ধ একটা রিভিউ লিখতে পারবো। পারবো যেটা, সেটা হলো দেখার পর ভালো মন্দ মিশিয়ে নিজের কেমন লেগেছে আর ওই সম্পর্কিত কিছু কথা–সেটা জানানো। ভালো খারাপ যাই লেগে থাকুক আমার মনে হয় এইরকম উদ্যোগকে অন্তত একটু প্রশংসা করা যায়। কারণ, বিখ্যাত সৃষ্টিগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা স্রষ্টার মুন্সিয়ানা নিঃসন্দেহে কালজয়ী–সেটা অস্বীকার করার কোনো জায়গাই নেই কিন্তু সেইগুলো যদি কালের পথ পেরিয়ে এসে একই জায়গায় একইভাবে আটকে থাকে, একইভাবে জনসম্মুখে পরিবেশন করা হয় তাহলে সেই স্থবিরত্ব, একঘেয়েমি হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে শিল্পের অগ্রগতিকে ব্যহত করবে। বলা ভালো, এটা শুধু শিল্প না বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জেমস ওয়াটের স্টীম ইঞ্জিন থেকেই ক্রমে বর্তমানে আমরা বৈদ্যুতিক ট্রেনে এসে পৌঁছেছি। এই অ্যান্থলজির চারটে গল্পের মধ্যে যে দুটো নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বরং বলা ভালো সমালোচনা হচ্ছে; সেটি হলো সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দুটো ছবি 'ফরগেট মি নট' আর 'বহুরূপীয়া'। চারটে গল্প থেকে শুধু ওই basic theme টা তুলে এনে আধুনিক পৃথিবীতে বসানো হয়েছে এবং যা পুরোদস্তর প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। এবার কথা হচ্ছে, পুরো 'রে' সিরিজটা নিয়েই অনেক সমালোচনা হচ্ছে এবং সেটা স্বাভাবিক ছিল আমাদের এই রক্ষণশীল বাঙালি সমাজে যেখানে সন্দীপ রায় ফেলুদাকে হাতে মোবাইল ফোন ধরালেই হইহই রইরই বেঁধে যায় সেখানে এইরকম ঘটনা খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন যে তার নামের পদবী মুখোপাধ্যায় হওয়ার কারণে তাকে এত সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে, সেই প্রসঙ্গে যাবো না। সমালোচনা তো খুব জরুরি শিল্পের উন্নতিসাধনের জন্য কিন্তু সেখানে একটা সীমারেখাও থাকে–সেইটা অতিক্রম করে গেলেই মুশকিল। পরমব্রত'র ফেলুদা আমার সেরকম একটা লাগেনি আর সাড়াও সেরকম ফেলতে পারেনি হয়তো আমি এবং আমার মত অনেকেই ফেলুদা নিয়ে গোঁড়া বলে। কিন্তু আমি ওই উদ্যোগটাকে সবসময় স্বাগত জানাই। ঠিক একইভাবে সৃজিতের 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ' দেখে অনেকেই বলেছে যে পরিচালকের সেরকম নিজস্ব কোনো স্পর্শ, মতামত তারা ওখানে খুঁজে পাননি কারণ ওটা বইয়ের গল্পকে পুরোপুরি ভিত্তি করে বানানো। সত্যজিৎ রায় নিজে ওনার কত সিনেমায় চিত্রনাট্য পাল্টেছেন। তাই এরকম দ্বন্দ্ব সারাজীবন ছিলো, আছে এবং থাকবে। অনুরাগ কাশ্যপ যখন শরৎচন্দ্রের ' দেবদাস ' থেকে 'দেব ডি' বানালেন তখন তো এত সমালোচনার মুখে তাকে পড়তে হয়নি। সিরিজের অন্য পরিচালকদ্বয়কেও এত সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই সৃজিতের পদবী নিয়ে করা ওই মন্তব্যটা হয়তো সত্যি। হ্যাঁ তাই বলে কি আমি সৃজিতের ভুয়সী প্রশংসাই করে যাবো না। সেটা একদমই না। ফরগেট মি নট বহুরূপীয়ার থেকে অনেকগুণ বেশি ভালো লেগেছে। বাকি দুই পরিচালক ও নিজের জায়গায় যথেষ্ট ভালো। 'স্পটলাইট', 'হাঙ্গামা হ্যা কিউ বারপাও' আমার ভালই লেগেছে। স্পটলাইটটা তো বেশ অন্যরকম লেগেছে। থ্রিলারের গল্প নিয়ে আলোচনা করা মানে মূর্খামি। তাই ওই নিয়ে কিছু বলছি না। গোটা সিরিজের প্রোডাকশন ভ্যালু নেটফ্লিক্সের থেকে যতটা প্রত্যাশিত ছিল ঠিক তেমনি হয়েছে। আর অভিনয়ের ডিপার্টমেন্টে পুরো যাকে বলে চাঁদের হাট বসেছিলো–যেটা সিরিজটাকে অন্য একটা উচ্চতায় পৌঁছে নিয়ে যায়। ক্যামেরা, পরিচালনা সবই ঠিকঠাক। ওপেনিং ক্রেডিটের অ্যানিমেশনটা যথেষ্ট প্রসংশনীয়। যারা নতুন কিছু দেখতে পছন্দ করে আমার মনে হয় না তাদের খুব একটা এটা খারাপ লাগবে। রবীন্দ্রসঙ্গীতে যেমন পাশ্চাত্য-যন্ত্রানুষঙ্গ অনেক অর্থডক্স লোকজনের মেনে নিতে অসুবিধে হয় এখানেও এই ব্যাপারটাই হয়েছে। সবশেষে এটাই বলার কে কি দেখতে, শুনতে পছন্দ করে সেটা তার একান্ত স্বাধিকারের মধ্যে পড়ে। তবে বিশ্বকবি স্বয়ং বলে গেছেন পুরোনো জিনিসকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের নূতন জিনিসকে গ্রহণ করতে হবে।


Copyright reserved: Utso Magazine


Comments

Popular posts from this blog

দ্বিতীয় পুরুষ (সিনেমা ২০২০)